ঢাকা,বুধবার, ২০ নভেম্বর ২০২৪

জেদ্দা বিমানবন্দরের পরিবর্তে বাংলাদেশে হবে হজযাত্রীদের ইমিগ্রেশন

নিউজ ডেস্ক ::
আগের মত সৌদি আরবের জেদ্দা বিমানবন্দরে গিয়ে বাংলাদেশি হজযাত্রীদের ইমিগ্রেশন করতে হবে না। এ বছর থেকে জেদ্দা বিমানবন্দরের পরিবর্তে ঢাকার হযরত শাহজালাল (রহ.) আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরেই সম্পন্ন হবে সৌদি কর্তৃপক্ষের বাংলাদেশি হজযাত্রীদের ইমিগ্রেশন-সংক্রান্ত সার্বিক কার্যক্রম। চলতি বছর থেকে বাংলাদেশি হজযাত্রীদের ইমিগ্রেশন বাংলাদেশেই সম্পন্ন করতে সম্মত হয়েছে বাংলাদেশ ও সৌদি আরব। বাংলাদেশি হজযাত্রীদের দুর্ভোগ কমাতে এ সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।

শুক্রবার সচিবালয়ে ধর্ম মন্ত্রণালয়ের সভাকক্ষে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে ধর্ম প্রতিমন্ত্রী শেখ মোহাম্মদ আবদুল্লাহ এ তথ্য জানান।

তিনি বলেন, বাংলাদেশি হজযাত্রীদের দুর্ভোগ কমাতে হজ ব্যবস্থাপনায় বিভিন্ন পরিবর্তন আনা হচ্ছে। সে হিসেবে এ বছর থেকে সৌদি আরবের জেদ্দার পরিবর্তে শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে একটি এক্সক্লুসিভ জোনে সৌদি আরবের ইমিগ্রেশন শেষ করা হবে। তাছাড়া আটটি বিভাগে জেলা সদরের ডিসি অফিসে হাজিদের আঙ্গুলের ছাপ নেওয়া হবে।

প্রতিমন্ত্রী জানান, প্রচলিত রীতি অনুসারে বাংলাদেশ বিমানের হজযাত্রীরা আশকোনা হজ ক্যাম্পে ও সৌদি এয়ার লাইন্সের যাত্রীরা শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে বাংলাদেশ অংশের ইমিগ্রেশন সম্পন্ন করেন। আসন্ন হজে একই নিয়মে তারা আশকোনা ক্যাম্পে ও শাহজালাল বিমানবন্দরে বাংলাদেশ অংশের ইমিগ্রেশন সম্পন্ন করবেন। এরপর উভয় বিমানের হজযাত্রীদের শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের একটি এক্সুসিভ জোনে নিয়ে যাওয়া হবে। সৌদি আরবের জেদ্দায় তাদের যে ইমিগ্রেশন হতো, সেই কাজটি এই এক্সক্লুসিভ জোনে সম্পন্ন করা হবে। এক্সক্লুসিভ জোনের সব কার্যক্রম সৌদি আরবের টেকনিক্যাল প্রতিনিধিদলের তত্ত্বাবধানে পরিচালিত হবে। এর ফলে বাংলাদেশের হজযাত্রীদের জেদ্দা বিমানবন্দরে ৬-৭ ঘণ্টা অপেক্ষা করার বিড়ম্বনা দূর হবে।

তিনি বলেন, ইমিগ্রেশন কার্যক্রম সুচারুভাবে সম্পাদন করতে হজ ভিসার জন্য দুতাবাসে পাসপোর্ট জমা দেওয়ার আগেই দেশের আট বিভাগে প্রত্যেক হজযাত্রীর দশ আঙ্গুলের হাতের ছাপ সংগ্রহ করা হবে। একই সঙ্গে ছবি তোলা ও পাসপোর্ট স্ক্যান করা হবে। আট বিভাগের প্রতিটি জেলা সদরের ডিসি অফিসে সৌদি আরবের টেকনিক্যাল প্রতিনিধিদলের তত্ত্বাবধানে এই কার্যক্রম পরিচালিত হবে। এর ফলে শাহজালালে সৌদি কর্তৃপক্ষের কার্যক্রম সহজ হবে।

কবে থেকে আঙ্গুলের ছাপ নেওয়া হবে জানতে চাইলে শেখ মোহাম্মদ আবদুল্লাহ বলেন, রোজার মাসের মাঝামাঝিতে এসএমএস করে জানিয়ে দেওয়া হবে, কবে থেকে হজযাত্রীদের আঙ্গুলের ছাপ নেওয়া হবে।

বাংলাদেশি হজযাত্রীদের সৌদি কর্তৃপক্ষের ইমিগ্রেশন বাংলাদেশে করার সিদ্ধান্ত কিভাবে নেওয়া হয়েছে তা তুলে ধরে প্রতিমন্ত্রী বলেন, সৌদি আরবের ডাইরেক্টর জেনারেল (পাসপোর্ট) মেজর জেনারেল সোলাইমান আব্দুল আজিজ ইয়াহ ইয়াহর নেতৃত্বে ১৪ সদস্যের প্রতিনিধিদল বাংলাদেশে এসেছেন।

বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় রাজধানীর ইন্টারকন্টিনেন্টাল হোটেলে আমাদের সঙ্গে এ নিয়ে একটি বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। বৈঠকে ইমিগ্রেশনের বিষয়ে সৌদি প্রতিনিধিদল সম্মত হলে সর্বসম্মতভাবে সিদ্ধান্ত হয়। সফররত সৌদি আরবের প্রতিনিধিদল স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী, প্রধানমন্ত্রীর মুখ্য সচিবের সঙ্গে সাক্ষাৎ করেছেন। আমরা উভয়পক্ষই আলাপ-আলোচনার মাধ্যমে এ বিষয়ে ঐক্যমত হয়েছি।

তিনি জানান, সৌদি আরবে হজযাত্রীদের জন্য বাড়ি ভাড়া নিয়ে যে সমস্যা হতো, সেটা এবার আর হবে না। ইতিমধ্যেই আমরা ভালো বাড়ি ভাড়া পেয়েছি। সেখানে ধর্ম মন্ত্রণালয়ের সচিব উপস্থিত থেকে এই কার্যক্রম পরিচালনা করছেন। সৌদি কর্তৃপক্ষের আগের মনোভাব এবারের মনোভাব এক না। এবার আমরা যে প্রস্তাবগুলো দিয়েছি তারা মেনে নিয়েছেন। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার দুরদর্শিতা এবং আন্তর্জাতিকভাবে ব্যাপ্তির কারণে এটা সম্ভব হয়েছে।

সংবাদ সম্মেলনে ধর্ম প্রতিমন্ত্রী বলেন, পবিত্র হজ পালনে বাংলাদেশ থেকে সরকারি ব্যবস্থাপনায় ৭ হাজার ১৯৮ জন ও বেসরকারি ব্যবস্থাপনায় ১ লাখ ২০ হাজার মোট ১ লাখ ২৭ হাজার ১৯৮ জন হজ্জে যাবেন। মোট হজযাত্রীদের শতকরা ৫০ ভাগ বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্সে ও অবশিষ্ট ৫০ ভাগ সৌদি এয়ারলাইন্সে করে সৌদি গমন করবেন।

সংবাদ সম্মেলনে ধর্ম মন্ত্রণালয় সংম্পর্কিত স্থায়ী কমিটির সদস্য আলহাজ্ব নজিবুল বশর মাইজভান্ডারি, ধর্মসচিব আনিছুর রহমান প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।

বাংলাদেশে সফররত সৌদি প্রতিনিধিদলে সৌদি আরবের ডাইরেক্টর জেনারেল (পাসপোর্ট) মেজর জেনারেল সোলাইমান আব্দুল আজিজ ইয়াহ ইয়াহ ছাড়াও মেজর জেনারেল খালেদ বিন ফাহাদ আল যুইয়াদ, ডক্টর হুসাইন বিন নাসের আল শাকিত, আলী বিন মোহাম্মদ আল ওতাইবি, মোহাম্মদ বিন ওবায়েদ আল উতাইবি, ব্রিগেডিয়ার সামি বিন আব্দুল্লাহ মুকিম, ইঞ্জিনিয়ার হামাদ বিন ইব্রাহিম আল হাম্মাদ, ড. আব্দুর রহমান আল ইসা, কর্নেল মোহাম্মদ বিন ওমর আল ঘামদি, ড. হামোদ বিন সাদ আল কোয়ারনি, হাসান বিন সাঈদ আল জাহারানি, ফাইহান মাহিয়া আল মাহিয়া, আব্দুর রহমান সাউদ আল মাহিয়া ও ক্যাপ্টেন মোহাম্মদ বিন নাসের আল হাল্লাফও রয়েছেন।

পাঠকের মতামত: